গেম খেলতে পছন্দ করেন? তাহলে আর দেরী কেন? দেশের সবচেয়ে ভালো গেমিং-পিসিটি নিয়ে আসুন নিজের ঘরে !
পিসিতে গেম খেলতে কে না ভালবাসে বলুন। নিত্য নতুন গেম মানুষের জীবনে নিয়ে আশে অনাবিল আনন্দ। আমি নিজে ও গেম খেলতে প্রচণ্ড ভালবাসি। নতুন বের হওয়া উচ্চ গ্রাফিক্যাল গেম গুলো ছেলে বুড়ো সবারই পছন্দ।
গেমিং পিসি ও সাধারণ পিসির মাঝে রয়েছে বেশ পার্থক্য।
সাধারণ পিসিতে যেসব হার্ডওয়্যার ব্যাবহার হয় তার সবই গেমিং পিসি তে থাকে। হার্ডওয়্যার এর তালিকায় গেমিং পিসিতে যেসব হার্ডওয়্যার ব্যাবহার করা হয় তা সাধারণ পিসিতে ব্যাবহার করা হার্ডওয়্যার এর তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ও কার্যক্ষম। তাই গেমার দের জন্য বেশ যাচাই বাছাই করে গেমিং পিসি কিনতে হয়। তা না হলে নতুন বের হওয়া গেম গুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়।
গেমিং পিসি কেনার আগে কিছু যাচাই বাছাই এর প্রয়োজন।
কারন পিসির যন্ত্রাংশ এর মাঝে সামঞ্জস্য না থাকলে, তা পরে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চাহিদা ও বাজেট অনুযায়ী থিক করতে হবে, কোন ধরনের পিসি কিনবেন? গেমিং পিসি বানাতে যে ধরনের যন্ত্রাংশ সাধারনত লাগে সেগুলো হলঃ উচ্চ ক্ষমতার প্রসেসর, প্রসেসর এর সাথে মানানসই গেমিং মাদারবোর্ড, উচ্চগতি ও বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন র্যাম, উচ্চগতি ও বেশি ধারণক্ষমতার হার্ডডিস্ক, ভালমানের গ্রাফিক্স কার্ড, ভালো কুলিং সিস্টেমসহ কেসিং, ভালমানের বেশি ওয়াটযুক্ত পাওয়ার সাপ্লাই, বাজারের সেরা ডিভিডি রাইটার, গেমিং মনিটর, গেমিং কীবোর্ড ও গেমিং মাউস।
প্রসেসর কেনার সময় যেসব কথা মনে রাখা উচিতঃ
১. প্রসেসর এর ফ্রন্ট সাইড বাস স্পীড যত বেশি হবে, প্রসেসর এর পারফরমেন্সও তত ভালো হবে। তাই বেশি বাস স্পীড এর প্রসেসর কেনা উচিত।
২. ইন্টেল প্রসেসর এর ক্ষেত্রে হাইপার থ্রেডিং ও এএমডি প্রসেসর এর ক্ষেত্রে হাইপার ট্রান্সপোর্ট টেকনোলজি সম্পন্ন প্রসেসর কেনা উচিত।
৩. বেশি ক্যাশযুক্ত প্রসেসর বেশি ধ্রুত কাজ করতে সক্ষম, তাই কেনার আগে ক্যাশ মেমোরির পরিমান দেখে নিতে হবে।
৪. বেশি ক্লক স্পীড ও কম বাস স্পীড বা ক্যাশ স্পীড এর প্রসেসরের চেয়ে কম ক্লক স্পীড ও বেশি বাস স্পীড বা ক্যাশ স্পীড এর প্রসেসরের পারফরমান্স ভালো হয়। তাই কেনার সময় এ তিনটে বিষয়ের মাঝে সামঞ্জস্য রেখে প্রসেসর বাছাই করা উচিত।
৫. প্রসেসরের এর আর্কিটেকচার যত ক্ষুদ্র হবে, প্রসেসর তত কম বিদ্যুৎ ব্যয় করে। তাই অপেক্ষাকৃত ছোট প্রসেসর কেনা উচিত।
৬. গেমিং প্রসেসরে ভবিষ্যতে ওভার-ক্লকিং করতে হতে পারে, তাই ওভার-ক্লকিং সাপোর্ট করে এমন প্রসেসর বাছাই করা উচিত। বাজারে কিছু প্রসেসর আছে যেগুলো আগে থেকে ওভার-ক্লকিং করা থাকে। দাম একটু বেশি হলেও এই প্রসেসর গুলো ভালো মানের হয়ে থাকে।
মাদারবোর্ড কেনার সময় যে সব বিষয় জেনে রাখা উচিতঃ
১. প্রসেসরের সকেটের সাথে মাদারবোর্ডের সকেটের মিল আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে।
২. এমন মাদারবোর্ড বেছে নিতে হবে যাতে বেশি সংখ্যক সাটা-কানেক্টর(উচ্চ ডাটা ট্রান্সফার ক্ষমতা সম্পন্ন) রয়েছে।
৩. উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ডিডিআর-৩ র্যাম সাপোর্ট করে এমন মাদারবোর্ড বেছে নিতে হবে। বেশি র্যাম স্লট যুক্ত মাদারবোর্ড বাছাই করা উচিত। এতে পরবর্তীতে র্যাম বাড়ানোর সুযোগ থাকে।
৪. বেশি গ্রাফিক্স-কার্ড স্লট যুক্ত মাদারবোর্ডের ক্ষেত্রে একসাথে একাধিক গ্রাফিক্স-কার্ড সংযুক্ত করে দারুণ গ্রাফিক্স পারফরমেন্স পাওয়া যায়। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রাফিক্স-কার্ড লাগানোর জন্য ২ টি বা ৪ টি পিসিআই স্লটসহ মাদারবোর্ড কিনতে হবে।
৫. পিসিআই এক্সপ্রেস নুন্যতম ১৬এক্স ক্ষমতা সম্পন্ন মাদারবোর্ড কিনা উচিত। এতে গ্রাফিক্স-কার্ড এর গতির পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
৬. ডুয়াল চ্যানেল সাপোর্টএড স্লটের মাদারবোর্ড কিনা দেখে কিনুন। কারন ডুয়াল চ্যানেলে র্যাম এর কাজের গতি বেড়ে যাবে।
৭. বেশি সংখ্যক ইউএসবি, ফায়ারওয়্যার পোর্টসহ মাদারবোর্ড কেনা উচিত। এতে বেশি সংখ্যক ডিভাইস যোগ করা যায়।
৮. ডুয়াল বায়োসের মাদারবোর্ড কেনার চেষ্টা করা উচিত। কারন এতে একটি বায়োসের সমস্যা হলে অপর বায়োস টি পিসিকে সচল রাখে।
৯. মাদারবোর্ড এর সাথে ড্রাইভার সিডি, ম্যানুয়াল, ইউজার গাইড, আইডি ক্যাবল বা সাটা ক্যাবল দেয়া আছে কিনা দেখে নেওয়া উচিত।
কেসিং কেনার যা যা লক্ষ্য রাখবেনঃ
১. আকারে বড় কেসিং গুলো কেনার চেষ্টা করবেন। কারন এতে ভেতরের যন্ত্রাংশ বেশি গরম হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। বাজারে ছোট ব্রিফকেসের মতো কাসিং পাওয়া যায়, ভুলেও তা নিতে যাবেন না। এগুলোর কুলিং সিস্টেম ভালো হয় না।
২. কেসিং এর সাথে পাওয়ার সাপ্লাই ও কুলিং ফ্যান দেয়া থাকে। অনেকের আরো কুলিং ফ্যান লাগানোর দরকার হতে পারে। সেজন্য কেসিং এ আলাদা ফ্যান লাগানোর ব্যবস্থা আছে কিনা দেখে নেওয়া উচিত।
৩. দাম বেশি হলেও অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার সাপ্লাই কিনে কেসিং এর সাথে যোগ করা উচিত। এতে ভালো পারফরমান্স পাওয়া যায়।
র্যাম কেনার সময় যে সব বিষয় মনে রাখা উচিতঃ
১. গেমারদের জন্য নুন্যতম ২ গিগাবাইট র্যাম প্রয়োজন। তবে আদর্শ গেমারদের জন্য ৬-৮ গিগাবাইট র্যাম থাকা উচিত।
২. মাদারবোর্ড যতটুকু পর্যন্ত র্যাম এর বাস স্পীড সাপোর্ট করে, ততটুকু বাস স্পীড সম্রিধ্য র্যাম কিনুন।
৩. কম ল্যাটেন্সির র্যাম কেনার চেষ্টা করুন। কারন ল্যাটেন্সি যত কম হবে, র্যাম এর কাজ করার দ্রুততা তত বেশি হবে। ল্যাটেন্সি হচ্ছে র্যাম এর ডাটা এক্সসেস করার সময়ের পরিমান।
গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে লক্ষ্য করুনঃ
১. কেসিং এর পাওয়ার সাপ্লাই এর কথা মাথায় রেখে গ্রাফিক্স-কার্ড কিনতে হবে। বেশি পাওয়ারের গ্রাফিক্স-কার্ড কিনতে চাইলে সে অনুযায়ী পাওয়ার সাপ্লাই থাকতে হবে।
২. ডাইরেক্ট এক্স ১০/১১ বা ওপেন জিএল ৩/৪ সমর্থিত কার্ড গেম খেলার জন্য বেশ ভালো।
৩. নুন্যতম পিক্সেল শেডার ৪.০ সাপোর্টএড গ্রাফিক্স-কার্ড কেনা উচিত।
৪. হার্ডকোর গেমাররা ডুয়েল কোর জিপিইউ সম্রিধ্য কার্ড কিনতে চেষ্টা করুন।
৫. কম বিদ্যুৎ খরচ করে এমন গ্রাফিক্স-কার্ড কেনার চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে বিদ্যুৎ বিল দেয়ার সময় মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হবে।
ভালো মানের মনিটর কিনতে যা যা লক্ষণীয়ঃ
১. বড় মাপের মনিটর নিলে গ্রাফিক্স-কার্ড উচ্চ মানের হতে হবে।
২. যথা সম্ভব কম রেসপন্স রেট যুক্ত মনিটর বেছে নেওয়া উচিত।
৩. কম বিদ্যুৎ খরচ করে এমন মনিটর বাছাই করা উচিত। যাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে আইপিএস ব্যাকআপও চলতে সমস্যা না হয়।
মাউস আর কীবোর্ড কিনুন ভালো মানেরঃ
গেমিং মাউস আর কীবোর্ড অন্যান্য সাধারণ মাউস আর কীবোর্ড এর চেয়ে আলাদা মানের হয়ে থাকে। এগুলোর স্পীড অনেক বেশি এবং এতে গেম খেলার জন্য আলাদা কিছু বাটন থাকে। ভালো ব্রান্ড দেখে মাউস আর কীবোর্ড কেনা উচিত।
আজ আর নয় সবাই ভাল থাকবেন। দেখা হবে আগামী টিউনে।
গেম খেলতে পছন্দ করেন? তাহলে আর দেরী কেন? দেশের সবচেয়ে ভালো গেমিং-পিসিটি নিয়ে আসুন নিজের ঘরে !
Reviewed by sohel
on
November 29, 2014
Rating: