ঐতিহ্যে দর্শনীয় নওগাঁ

Bangladesh

নানা ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও প্রাচীন নিদর্শন সমৃদ্ধ রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় জেলা নওগাঁ। এর উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে নাটোর ও রাজশাহী জেলা, পূর্বে জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলা এবং পশ্চিমে নবাবগঞ্জ জেলা। নওগাঁ প্রাচীন ইতিহাস, সভ্যতা ও স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আমাদের নওগাঁ প্রতিনিধি বাবুল আখতার রানা



নানা ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও প্রাচীন নিদর্শন সমৃদ্ধ রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় জেলা নওগাঁ। এর উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে নাটোর ও রাজশাহী জেলা, পূর্বে জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলা এবং পশ্চিমে নবাবগঞ্জ জেলা। আত্রাই, ছোট যমুনা, নাগর, তুলসীগঙ্গা, পুনর্ভবা এ জেলার প্রধান নদী। প্রাচীন ইতিহাস, সভ্যতা ও স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। মাঠভরা ফসল, বাতাসে নতুন ধানের ঘ্রাণ। বরেন্দ্র ভূমির উঁচু ঢালু পথ চলতে দেখা মিলবে মৌর্য, গুপ্ত ও পাল থেকে শুরু করে মোগল আমলের সাম্রাজ্য। সন্ধ্যায় দূরের কোনো সাঁওতাল পল্লী থেকে ভেসে আসবে সারা দিনের ক্লান্তি জুড়ানোর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সুর।



► কিভাবে যাবেন : ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী থেকে বাসে সরাসরি নওগাঁয় যাওয়া যাবে। শ্যামলী, হানিফ, এসআর, কেয়া, বাবলু, ডিপজল, টিআরসহ অনেক পরিবহন সংস্থার এসি ও নন এসি বাস চলে এ পথে। ভাড়া ৪০০-৬০০ টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে নওগাঁয় আসে শ্যামলী পরিবহন। ভাড়া ৭০০ টাকা। রাজশাহী থেকেও বাসে নওগাঁয় আসা যায় মাত্র ৭০ টাকায়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে আন্তঃনগর, একতা এক্সপ্রেস, লালমণি, নীল সাগর ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস, রাজশাহী থেকে বরেন্দ্র ও তিতুমীর, খুলনা থেকে সীমান্ত ও রূপসা এক্সপ্রেসে সান্তাহার নেমে সহজেই নওগাঁয় আসা যায়।



►খাওয়া-দাওয়া : এখানে বেশ কয়েকটি ভালো ও উন্নত মানের খাবার হোটেল রয়েছে। নওগাঁর বিখ্যাত প্যারা সন্দেশ পাওয়া যায় মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ছাড়াও বেশ কয়েকটি মিষ্টির দোকানে।

কোথায় থাকবেন : নওগাঁ শহরে থাকার জন্য শহরের সান্তাহার রোডে হোটেল অবকাশ, হোটেল ফারিয়াল, ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মোটেল চিশতি, বরুনকান্দি এলাকায় মোটেল প্লাবন, মুক্তির মোড়ে হোটেল আগমনী, শহরের পার-নওগাঁ এলাকায় হোটেল যমুনা, পুরনো বাসস্ট্যাণ্ডে হোটেল সরণী। এসব হোটেলে ২০০-১০০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

► দর্শনীয় স্থান : ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও প্রাচীন নিদর্শন সমৃদ্ধ নওগাঁ ইতিহাসের বহু নিদশর্নের সাক্ষী। এখানকার বিভিন্ন দর্শনীয়স্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার    পাহাড়পুর গ্রামে ৬৮ একর জমির ওপর অবস্থিত পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। এর আরেক নাম সোমপুর বিহার। পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল এ বিহারটি নির্মাণ করেন। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ইউনেস্কো ঘোষিত ৩২২তম বিশ্বঐতিহ্য।

►হলুদ বিহার : একই উপজেলার বিলাসবাড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত প্রাচীন প্রত্নস্থল হলুদ বিহার। স্থানীয়ভাবে এটি দ্বীপগঞ্জ নামে পরিচিত।

► কুসুম্বা মসজিদ : মান্দা উপজেলার কুসুম্বা গ্রামে অবস্থিত দেশের উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কুসুম্বা মসজিদ। এর আরেক নাম কালাপাহাড়। শেরশাহ শুরির শাসনামলের শেষ দিকে সুলতান গিয়াসউদ্দীন বাহাদুর শাহের রাজত্বকালে সোলায়মান মসজিদটি নির্মাণ করেন। পাঁচ টাকার নোটে এই মসজিদের ছবি রয়েছে।

►পতিসর কুঠিবাড়ী : আত্রাই উপজেলার পতিসরে নাগর নদীর তীরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারির কালিগ্রাম পরগনার সদর কাচারি ছিল এখানে। প্রতি বছর ২৫ বৈশাখ কবির জন্মদিনে নানা অনুষ্ঠান এবং লোকজ মেলা হয়ে থাকে।

►দুবলহাটি রাজবাড়ী : নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নে অবস্থিত জমিদার জগত্রাম রাজ পরিবারের আবাসস্থল। যাকে বলা হয় দুবলহাটি রাজবাড়ী।

► বলিহার রাজবাড়ী : জেলা সদরের বলিহার গ্রামে অবস্থিত এটি। সম্রাট আওরঙ্গজেব কর্তৃক জায়গির লাভ করে বলিহারের জমিদাররা এ এলাকায় নানা স্থাপনা গড়ে তোলেন। বলিহার রাজবাড়ী এর মধ্যে অন্যতম।

►জলিল শিশু পার্ক : মরহুম আবদুল জলিল এই পার্কটি তৈরি করেছিলেন। ছোট শিশুদের বিনোদনের কেন্দ্রস্থল এই পার্কটি। এ ছাড়া বড় ও ছোটদের জন্য সাহানাবাগ সিটি নামে আরও একটি পার্ক রয়েছে।

►জগদল বিহার : জেলার ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত প্রত্নস্থল জগদল বিহার। পাল রাজাদের আমলে নির্মিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য। রামপালের রাজত্বকালে এ বিহারটি নির্মাণ করা হয়।

►শালবন বিহার : ধামইরহাট উপজেলায় এটি অবস্থিত। এই শালবন প্রায় দুইশ বছরের পুরনো। বর্তমানে এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই শালবনের মাঝখানেই রয়েছে ঐতিহাসিক আলতা দিঘি। যা দেখলেই সবার চোখ জুড়িয়ে যাবে।

ঐতিহ্যে দর্শনীয় নওগাঁ ঐতিহ্যে দর্শনীয় নওগাঁ Reviewed by sohel on October 15, 2016 Rating: 5
Powered by Blogger.